★★বিভাগীয় সংবাদঃ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের কাজীর
খীল গ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলে হামলার
ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দল হুজুরের
মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ,
ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর
সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩০ জন
আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
বলে জানা গেছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২শ’ রাউন্ড
ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। চন্দ্রঘোনায় কাপ্তাই সড়কের
চন্দ্রঘোনার বুইজ্যার দোকান ও হাইব্যার
গোট্টা এলাকায় সংঘর্ষকারীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ
করতে গুলি চালালে জনৈক মো. সেলিম সহ ৪ জন
গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যদিকে কাপ্তাই সড়কের শান্তির হাট,
গোছরা, ঘাটচেকসহ অন্তত ১০টি স্থানে টায়ার
জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেয় একপক্ষ। হামলার
ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো রাঙ্গুনিয়ায় কওমি-সুন্নি দুই
সমপ্রদায়ের মধ্যে চরম উত্তেজনাসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের
আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের
মধ্যে কারো মামলা নেয়নি পুলিশ। পুলিশ ও
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১১টায়
উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে কাজীর খীল
গ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবীর মাহফিলে মাওলানা গোলাম
কিবরিয়া একটি বক্তব্য
দিলে অতর্কিতভাবে লাঠিসোটা ও কিরিচ
নিয়ে হামলা চালায় আরেকটি দল। এই সময় গোলাম
কিবরিয়াকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে মাইক,
লাইট ও প্যান্ডেল ভাঙচুর করা হয়। হামলায় অন্যদের
মধ্যে আহত হয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আকতার
হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. মান্নান, মো. কালাম, মো.
জসিম। হামলায় মাহফিলের আয়োজকের এক সদস্য মো.
সাকিবকে কিরিচ
দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক আহত
করে অপরপক্ষের সমর্থকরা।
পরে পার্কিংয়ে রাখা রাহাতিয়া দরবার শরীফের
পীর সৈয়দ ওবাইদুল মোস্তফা নঈমীর প্রাইভেট কারসহ
৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মাহফিলে উপস্থিত
সমর্থকরা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। এই
ঘটনা পুরো রাঙ্গুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাত
১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হামলা,
সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনা ভয়াবহতায় রূপ নেয়। হামলার
ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে একপক্ষ কাপ্তাই সড়কের গোডাউন
এলাকায় মো. ওসমানের ফার্নিচারসহ
দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। তারা ৮/১০টি
দোকান ভাঙচুর করে ও লুটপাট চালায়। একপক্ষের
নেতা ইছাখালী মাদরাসার মাওলানা ইউসুফ
দাবি করেন, সুন্নি সমর্থকরা জড়ো হয়ে উপজেলা সদরের
ইছাখালী রহমানিয়া মাদ্রাসায় হামলা ও মাদরাসার
মাইক, নলকূপ, আসবাবপত্র তছনছ করে।
পরে মাদরাসা মাঠে রাখা একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
তারা রাজবাড়ী জেলা সদরের জহিরুল
ইসলামকে মাথায় কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।
অন্যদিকে আরেকপক্ষের নেতা রাহাতিয়া দরবারের
সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মাওলানা ওবাইদুল
মোস্তফা নঈমী জানান, সরফভাটায় ঈদে মিলাদুন্নবীর
মাহফিলে কওমি জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে নবী প্রেমিকদের
আহত করে। তারা আমাকে হত্যার
উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।
আমাকে না পেয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। সুন্নি আদর্শের
কেউ মারামারির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। এ ঘটনায়
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ায় কওমি ও সুন্নিদের
মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো.
ওয়ালি উল্লাহ অলি বলেন, একটি মাহফিলের
ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো কওমি-সুন্নিদের মধ্যে সংঘর্ষ
ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২শ’
রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় র্যাব ও
বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।