★★আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী ১৭ বছর বয়সী মালালা ইউসুফজাই। শৈশব থেকেই সে নারীশিক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে।
সোয়াত উপত্যকায় শিকার হয়েছে তালেবানের
হামলার।
এরপরও দমেনি সে। লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এখনো। তার এই
লড়াকু স্বভাব নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। কিন্তু মন
গলাতে পারেনি পাকিস্তানিদের। দেশটির অনেক মানুষের
কাছে মালালা পশ্চিমাদের দালাল।
দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ
পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব প্রবল। তাই পশ্চিমাদের পছন্দের
মালালাও তাদের কাছে অপছন্দের।
সম্প্রতি পাকিস্তানের দ্য হেরাল্ড সাময়িকীতে রেহেমুল
হকের লেখা এক
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মালালাকে নিয়ে এমন বিতর্কের
পেছনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির
নানা কারণ।
ব্যক্তিগত একটি ঘটনা দিয়ে লেখ এ প্রতিবেদন শুরু করেন।
২০১২ সালের শেষ দিকে তরুণদের পরিচয়বিষয়ক
একটি গবেষণার কাজ করতে তিনি লাহোরে গিয়েছিলেন।
তখন মালালার ওপর তালেবানের হামলার
বিষয়ে তিনি তরুণদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগের
সুবিধা ভোগকারী তরুণেরা তাকে জানান, মালালার
ওপর তালেবানের কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এগুলো সাজানো নাটক।
যেসব তরুণের সামাজিক যোগাযোগের সুবিধা ভোগ করার
মতো সুযোগ নেই তারা বিশ্বাস করতেন মালালার ওপর
হামলার ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনা সম্পর্কে সমাজের দুই
অংশের তরুণ প্রজšে§র মধ্যে এ দুই ধরনের
ধারণা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লেখক সুশীল সমাজের
প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সমাজে আদর্শিক
জটিলতা আছে। এখানে ইসলামি ধ্যান-ধারণার
চর্চা যেমন আছে তেমনি আছে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ,
নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদ, উদারতন্ত্র ও বাম
চিন্তাধারা। তাই শাসকদের এমন
একটি নীতি নিয়ে দেশটি পরিচালনা করতে হয়, যাতে সব
পক্ষকেই মোটামুটি সন্তুষ্ট রাখা যায়।
তিনি জানান, ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদের
প্রতি শাসকদের পক্ষপাত বেশি থাকে। আর অন্য
আদর্শিক ভাবনার গোষ্ঠীগুলো নিপীড়নের শিকার হয়।
স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়েও সবার মতাদর্শের
প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর শিক্ষা দেয়ার
বদলে ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদকে অনেক
বেশি গুরুত্ব দেয়। এমন পরিবেশ-পরিস্থিতির
মধ্যে যারা বেড়ে ওঠে তাদের
মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা থাকে না, নিজস্ব
চিন্তাভাবনা আঁকড়ে বসে থাকে তারা।
লেখক আরো লেখেন, শিক্ষাসহ অন্যান্য
সুযোগসুবিধা পাওয়ার দিক থেকে যারা এগিয়ে থাকেন
তারা আসলে সুশীল সমাজেরই অংশ। সুবিধা ভোগ
করা গোষ্ঠির মধ্যে যেহেতু এক ধারার চিন্তা বিদ্যমান
থাকে তাই তারা অন্যভাবে ভেবে দেখার
চেষ্টা করে না। চিন্তার গোঁড়ামি তাদের পেয়ে বসে।
নিজেদের ভাবনার বাইরে কিছু
ঘটে গেলে তারা সেটাকে স্বীকার করতে চায় না।
লেখক এবার প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে বলেন, মালালার ওপর
তালেবানের হামলার বিষয়টিও তাদের কাছে এমন
বিষয়ই ছিল, যে কারণে সমাজে অধিকতর সুবিধা ভোগ
করা তরুণ প্রজš§ সেটি স্বীকার করতে পারেনি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আল-কায়েদা ও
তালেবানকে নির্মূল করার নামে পাকিস্তান ও তার
পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তানে বেশ কয়েক বছর
ধরে ড্রোন হামলাসহ নানাভাবে আধিপত্য বিস্তার
করে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
এটি পাকিস্তানের
সমাজে মার্কিনবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের
আছে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব, আর পাকিস্তানিদের
আছে মার্কিনবিরোধী মনোভাব। তাই মালালা যখন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করে,
তার নারীশিক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার
ভূমিকায় পশ্চিমা বিশ্ব প্রশংসামুখর হয়, তখন
পশ্চিমাদের সঙ্গে এই সখ্য
মেনে নিতে পারে না পাকিস্তানের অনেকে।
তাকে দালাল আখ্যায়িত করে।
লেখকের ভাষ্য, পাকিস্তানের মানুষের
কাছে মালালা নিজের কোনো যোগ্যতায় শান্তিতে নোবেল
পায়নি। পশ্চিমারা পাকিস্তানকে হেয়
করতে সাজানো নাটক করে মালালাকে মাথায়
তুলেছে, শান্তিতে পুরস্কার দিয়েছে। এর
মাধ্যমে তারা বোঝাতে চেয়েছে,
ইসলামবিরোধী অবস্থান নিলে পুরস্কার পাওয়া যায়।
আর পশ্চিমাদের কাছে, তালেবানের কড়াকড়ি আর
রক্তচক্ষু
উপেক্ষা করে মালালা নিজে পড়াশোনা করেছে এবং অন্য
কিশোরীদেরও পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। মালালা তাই
অন্যায়-অপশাসনের বির“দ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। সূত্র : দ্য হেরাল্ড
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন